" মেঘের পাহাড়ে আমার গল্প গুলি "
পর্ব: ১
অনেক দিন হলো কাজের চাপ এতো পরিমানে বেড়েছে যে মায়ের ফোনটাও ঠিকঠাক রিসিভ করা হচ্ছে না। ঠিক সকাল ভেলা ফজরের আজান পরলে মার ফোনটা কোনদিনও মিস যায় না বিষয় টা যদিও অস্বস্তিকর হলেও পৃথিবীর কোন সন্তান চায়না সকাল সকাল ফোনটা ওফুওওওওও বলে কেটে দেই। ঠিক এমনটা আমার দিক থেকে একটু ভিন্ন ভাবে হয়ে থাকে ওফুও মা এতো সকাল সকাল কেউ ফোন দেয়! নামাযের আরো ৩০ মিনিট বাকি এই বলতেনা বলতেই মায়ের সেই ক্লান্তিহীন মৃদু হাসি দিয়ে বলে বাবা কই আমার তো কষ্ট হয় না! বাবাকে ফোন করতে! আমার বাবার কিসের কষ্ট! ঐ উুঠ বলছি উুঠে ওযু কর যা। যাই হক কিন্তু আজ সকালটা একটু অন্যরকম নামাজ শেষ করেই ফোনটা হাতে নিয়ে চা বানানো টা একটা বাজে অভ্যাসের দিকে মোড় নিয়েছে ইহে দ্যাৎ ছাই কেতলিটাও ঠিকঠাক ধরার আগেই গরম চা পরে গেলো পায়ে ইহ্ মা কি ঝালা করছে আজ আর চা খাওয়া হয়ে গেছে দ্যাৎ ছাই। কাজের ছেলেটাও ঘুমোচ্ছে ওফু কি যে করি ছেলেটাও রাত করে ঘুমিয়েছে ওর আবার হিন্দি গান সিনেমা হলে সারা রাত জেগে থাকত পারে, আর ফেলফেল করে হাসে হাসিতেও সভ্যতার বালাই নাই এর মাঝে আবার ঘুম ভাঙ্গালে হ-য-ব-র-ল পাকাবে। হঠাৎ সকাল সকাল ধমকা হাওয়া পরেছে জানালার পর্দা গুলি ফাঁতফাঁত করে উড়ছে এরই মাঝে বৃষ্টির উপশম ওফুও এতো কাজ একা সম্ভব না। রুকন.... রুকন......
কোনো সাড়া শব্দ নাই ছেলেটা মনে হয় আজও রাত করেছে।
পায়ের ঝালা কিছু কমেছে শুনেছি আগুনে পুড়াতে টুথপেস্ট দিলে বেশ আরাম পাওয়া যায়। জানালাটা কেন জানি আজ লাগাতে ইচ্ছে করছেনা হাওয়াটা বেশ ভালই লাগছে খারাপ নাহ্ সাথে হালকা বৃষ্টির পানি বাতাসের সাথে ভেসে আসছে বাহ্ চমৎকার। কিন্তু মাথাই হঠাৎ করে চেপে বসেছে বৃষ্টির পানিতে ভেজা।
ছোট বেলায় গামাছি হলে মা বলতেন বৃষ্টিতে ভিজতে আজ কৌতূহলেই ভিজতে ইচ্ছা করছে জানালাটা বন্ধ করে ছাদে চলেগেলাম ইহ্ যা কপাল মন্দ হলে যা হয় আরকি ইদানীং গার্ডম্যানটাও বড্ড চালাক হয়েছে দেখছি চার তলার ছেলেরা প্রায় প্রায় সিগারেট খেতে চলে আসে ছাদে তাই হয়ত বাড়ি ওয়ালা তালা দিতে বলেছে। চলে এলাম নিচে কিরে ঘুম ভাঙ্গছে? ভাইজান ঘুমতো আগেই ভাঙ্গছে গাট্টি মাইরা হুইয়া আসিলাম সহাল সহাল যা টেলহা বাসাত কন উুঠতে কি মন চায়? সারামজাদা বলে কি!!!! আমি তোরে ডাকছিলাম শুনছিলি? কি জানি ভাইজান তই ভাইজান আমহের গলার মত আওয়াজ আইছিল বলে দাতলা দাত দিয়ে ফিকফিক করে হাসতাসে....
কতো বড় বেয়াদব। ভাইজান চা খাইবাইন? মুখ বিড়বিড় করে বল্লাম হুম। অনেক দিন হলো কবিতা পড়াও হয়না লিখাও হয়না আমার আবার একটা বাজে অভ্যাস আছে ভাল কাগজ না হলে লিখতে মন চায় না তাই পুড়নো ডাইরি গুলি খুঁজতে লাগলাম আর গুনগুন করে বলতে লাগলাম
" ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুয়ো নাআমার এতো সাধের কান্নার দাগ ধুয়ো নাসে যেন এসে দেখে,পথ চেয়ে তার কেমন করে কেঁদেছি ।। দোহাই গানের বীণামনকে ভরে তুলো না।। দেখেই তাকে ব্যথার এ গান ভুলো নাসে যেন এসে শোনেতার বিরহে কী সুর আমি সেধেছি ।।"
আরে হঠাৎ করে চোখ পড়ল সৃষ্টি দেওয়া ডাইরিটা হালকা মিষ্টি রংয়ের মোলাট। কোন কিছু না ভেবে হাতে তুলে নিলাম ডাইরির পাতা গুলি ঢেম ঢেম পুড়নো একটা গ্রান হয়ে গেছে বেশ ভালই লাগছে বাহ্ সৃষ্টির হাতের লেখা গুলি বেশ সুন্দর ছিল খুব জড়াজড়া আমি তার দিক থেকে একদম আলাদা হাতের লেখা গুলি খুব বাজে আমাকে মজা করে প্রায়শই বলত তোমার বাবা তোমাকে দাগটানা খাতা কিনে দেইনি নিশ্চয় বড্ড কিপটে শশুড় মশাই সেটা কল্পনা করে মৃদু হেসে উঠলাম। পাতা গুলি ওলটাতে ওলটাতে হঠাৎ গোলাপের পাপড়ি গুলো চোখে পড়লো লাল গোলাপ তার রং হারিয়ে কালো রূপ নিয়েছে বাহ্.........
আরে কি চমৎকার এই লাইনটা তো কখনো চোখে পড়ে নাই
" তুমি আর আমি আর এক কাপ চা"
বাহ্ চমৎকার টানা টানা অক্ষরে লিখা..... ভাইজান চা নেন।
ভাইজান আইজ সালমা খান আইছে,
আমি ভ্রু কুঁচকে বল্লাম তোর ঘুম কম হইছে যা ঘুমা।
না ভাইজান খবরের কাগজে ছাফাইছে এই দেহেন মেলা বড় ছবি দিছে ভাইজান আমার চাচাই কইতো আমার ছুরতে নাকি সালমান খানের হাব-ভাব আছে
হাছা না ভাইজান?
বিড়বিড় করে বল্লাম ইহ্ দাত গুলাইন আগে আয়নাতে দেখ।
ভাইজান কাগজডা পইড়া হুনাইবেন?
কলিং বাজলো যা দেখত কে আসছে ।
ভাইজান....... ভাইজান............
ডাইবার আইছে আইজ নাকি সদরঘাট যাইবার কতা?
ওহ্ হ্যা দেড়ি হয়ে গেছে,
যা আমার জন্য পানি গরম কর আমার আবার শীত বা গরমকাল ভেদাভেদ নাই গরম পানি ছাড়া গোসল করতে পারি না। ঝটপট গোসল শেষ করে নিচে গেলাম।
স্যার আইজ বিসুতবার না? আইজ কি কাম? আইজ তো ছুটি কাটাইন........
আজ একটু চাঁদপুর যাব ছাএ অবস্থার বন্ধুর বাড়ি।
ও মেলা দূর, স্যার কি এলহাই যাইবাইন?
হ্যা কাউরে কি দেখতে পাচ্ছো আশে পাশে আমার? চুপচাপ গাড়ি চালাও।
যাবার সময় সৃষ্টির দেওয়া ডাইরিটা নিয়ে নিলাম অন্ত্যত সময় টা কাটবে। যেতে যেতে প্রায় ১০:১৫ ভেজে গেছে। ১০:০০
লঞ্চ মিস করলাম শালা মোবারক বেটার জন্য লঞ্চ মিস হলো ইস্ ১৫ টা মিনিট আগে আসলেও হত দ্যাৎ।
১১:৩০ একটা লঞ্চ আছে ঐটাই যেতে হবে। ছোট বেলা থেকে মা বলতো আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে এই উক্তি দিয়ে মনকে সামাল দিলাম।
ভাইজান পাচঁটা টেকা দেন..... ভাত খামু,
পাচঁ টাকা দিয়ে কি ভাত খাবি?
এইনে ব্যাগ টা নে লঞ্চে দিয়ে আই ৩৫ টাকা দিব, বাহ্ বলার আগেই ছেলেটা বেশ আনন্দে ব্যাগটা তুলে নিল।
শুনেছি লঞ্চ জার্নি নাকি লঞ্চের ছাদে বেশ মজা পকৃতি উপভোগ করা যায় তাও কেবিন নিলাম কারন আকাশের অবস্তা ভাল না যখনতখন বৃষ্টি নামতে পারে।
বাহ্ লঞ্চের মাথায় দাড়ালে দারুণ লাগেতো সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কালে আসা হয়েছিল অনুভূতি গুলো পুড়নো হয় নাই বেশ ভালই লাগছে।
নীচ থেকে চা নিয়ে কেবিনের উদ্দেশ্য রওনা দেই।
লঞ্চের বারান্দা পাশে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি সৃষ্টির কথা মনে পড়ে গেল ও আবার চা-টা খাই না হুমায়ুন স্যারের বই তাকে খুব টানে সেখান থেকে পড়েছে চা খেলে নাকি গায়ের চামড়া কালো হয়ে যায় হা-হা-হা হেসে উঠলাম।
দক্ষিন দিকের হাওয়া আর ভাল লাগছে না এক পাশ হয়ে হাওয়া খাওয়ার থেকে বরং একটু ছাদ থেকে আসি বলে ঘুরতেই একি!!!!!!!
"২য় পর্বের জন্য সাথেই থাকেন"
লেখক: মো: আব্দুল্লাহ আল জুম্মান।
অনেক অনেক শুভকামনা রইল। ভূল - ত্রুটি গুলি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
0 Comments