" মেঘের পাহাড়ে আমার গল্প গুলি "
পর্ব ০৪
লাস্ট একবার ফোন দিবো নাকি সৃষ্টিকে?
ড্রাইভিং করার সময় আবার সৃষ্টির মানা আছে একদমই ফোনে কথা বলা যাবে না।
যখনি ফোনটা হাতে নিব গাড়ির জানালা দিয়ে কাঁধে এক থাবা দিয়ে বসল,
কি স্মার্ট ম্যান হাউ আর ইউ?
আরে মসিউর ভাই কেমন আছেন?
কিছু না বলেই হুট করে গাড়িতে উুঠে পড়ল,
কেন জানিস নাহ্! আমি সব সময় ভাল থাকি,
মসিউর ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভাই খুব রসিক মানুষ, আর কবিতা, গান - আবৃতি কোন অংশে কম না।
এক কথায় কবিতা আবৃতির অনুপ্রেরণা পেয়েছি ওনার কাছ থেকেই।
কিরে মুখে চাপা হাসি? ব্যাপার কি বলতো বউ কি ইদানীং বেশী আদর যত্ন নিচ্ছে নাকি? হা হা হা
না ভাই তেমন কিছু না।
মুখে সিগারেট রেখে বিড়বিড় করে বলছে তাহলে রামছাগলের বাচ্চার মত হাসছিস কেন?
মসিউর ভাইয়ের সিগারেট খাওয়াটা যে কেউ দেখে বলবে অনেক সাধনার ফল বাহ্ কি মজা করে খায় ধুয়া গুলি মনে হয় পানির মত গিলে ফেলছে আবার ধুয়া গুলি অনবরত ছেড়েই যাচ্ছে বাহ্,
কি হা করে কি দেখছিস? আমি কি চিড়িয়াখানার হনুমান নাকি!
এইখানে কি করিস?
ভাই বড় খালার বাসায় কাজ ছিল।
ও আচ্ছা শুন নেক্সট উইকে তোর গাড়িটা লাগবে একটা শর্ট ফিল্মের কাজ করছি বুঝলি?
আচ্ছা তবে আমাকে এক দিন আগে জানিয়ে দিয়েন,
ওকে সেটা আমি সময় হলে জানিয়ে দিব।
এই লোকটা কি অদ্ভুত কিছু না বলেই কাকে না কাকে দেখেই হুট করে চলে গেল।
সৃষ্টির বাবা পেশায় একজন ডাক্তার আরকি ময়নাতদন্তের রিপোর্টার ছিলেন তাই শত্রুর অভাব নাই যদিও অনেক ভাল মানুষ ছিলেন।
দ্যাৎ কি সব আজেবাজে চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
মসিউর ভাই যাবার সময় লাইটার টা ফেলে গেছে,
আমি নিশ্চিত উনি আবার আসবেন তাই যত্ন সহকারে রেখে দেয়াই ভাল।
মসিউর ভাই আগাগোড়া তার ছোট ভাইয়ের মত এক কথায় অবিকল নকল করে আল্লাহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এদের দুই ভাইকে না দেখলে বুঝাই যাবে না কত নিখুঁত কর্ম।
এদের দেখে আমার Alexandre Dumas কথা মনে পড়ে যায় লেখক টা চমৎকার লিখেন,
বইটা হলো দ্য কর্সিকান ব্রাদার্স কি মিল বইটার সাথে মসিউর ভাইয়ের হা হা হা।
কর্সিকান এক বনেদী পরিবারে জন্ম নেওয়া যমজ ভাই লুসিয়েন ও লুই দো ফ্রানশির। চেহারায় এতই মিল যে ছােটবেলায় ওদের মা পর্যন্ত কোনটা কোনজন চেনার জন্যে জামায় চিহ্ন দিয়ে রাখতে বাধ্য হতেন। দেখতে এক হলে কি হবে? দুজনের মন-মানসিকতা সম্পূর্ণ বিপরীত। একজন বুনাে স্বভাবের খাটি কর্সিকান, অন্যজন ফরাসী সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। একজনের সখ্যতা বন্দুক-পিস্তল-ছােরার সঙ্গে; অন্যজনের প্রেম দর্শন-ইতিহাস-কবিতার সঙ্গে। কিন্তু পরস্পরের প্রতি ভালবাসায় কোন খাদ নেই। বিপরীত চরিত্রের এই দুই ভাইকে নিয়েই বিশ্বখ্যাত কথা সাহিত্যিক আলেকজান্দার দ্যুমার অমর সৃষ্টি।
হঠাৎ বাসা থেকে ফোন!
ভাইজান আমহে কই?
সৃষ্টি বোজানরে লইয়া হাসপাতাল আইছি লগে কেরামত স্যার আইছে।
স্যারকে ফোনটা দে।
এই লন স্যার ভাইজান কতা কইব,
জ্বী বলেন মাহিম সাহেব ও বাই দ্যা ওয়ে আপনি সোজা সেন পাড়া সাত তারা মসজিদের পিছনের গলিতে চলে আসেন হাসপাতালে আর আসতে হবে নাহ্ আমার এক বন্ধু নিউরোলজিস্ট তাই ওনাকে দেখাব।
কি হয়েছে স্যার?
তেমন কিছুনা মাথায় একটু ইনজুরি হয়েছে। তাই ড্রেসিং করে ডা.ওসমানের সাথে স্বাক্ষাত করে যাওয়াটা বেটার।
কাজের ছেলেটা জুড়ে জুড়ে বলছে কেরামত স্যার কইন পাঙ্কা পড়ছে মাতাত,
ঔ তুই চুপ করবি?
মাহিম সাহেব লেট করবেন নাহ্ চলে আসেন কেমন?
জ্বী।
ওকে রাখি এবার।
আমি কিছুই বুঝতে পাড়ছি না কি করব মাকে জানাবো?
নাকি সোঝা চলে যাব?
কিছু চিন্তা না করেই সোজা চলে আসলাম।
কেরামত স্যার ফোন ধরছে না কেন?
দ্যাৎ,
সরি মাহিম ভাই ডা. ওসমান সামনে ছিল।
সৃষ্টি তুমি ঠিক আছো?
মায়াবী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল সৃষ্টি,
বুঝতে পেরেছি সৃষ্টির কষ্ট হচ্ছে।
রুকন তুই গাড়ির ভিতরে বস আর তোর আপাকে ভাল করে ধরে বস।
আইচ্ছা ভাইজান।
আমি গাড়ির লোকিং গ্লাস দিয়ে সৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলাম ইস চোখ টা ভিজে আছে।
সৃষ্টি?
হুম,
কষ্ট হচ্ছে?
কোন উওর দিল না সৃষ্টি।
মার ফোন,
রুকন ফোনটা ধরে মাকে বল রাফসানকে নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসতে।
আইচ্ছা ভাইজান।
কেরামত স্যার?
ডা. ওসমান কি বলেছে?
সব কিছু প্রেসক্রিপশনে লিখা আছে।
এই লোকটার কথার খুব দাম,
বাজে রকমের উওর দেয়, তবে লোকটা খারাপ নাহ্ সবসময় চিন্তা উনার মাথায় ঘুরপাক খায় ছোট বেলা থেকে বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন ওনার শেষমেশ এই সব পাগলামির কারনে বউটাও চলে গেছে।
বকুল ফুল গাছটার নিচে গাড়িটা দাড় করালাম।
সৃষ্টি গাছের নিচে পরে থাকা বকুল ফুল গুলির দিকে তাকিয়ে রইল।
কি হল সৃষ্টি কোন সমস্যা হচ্ছে?
কি দেখছো?
সৃষ্টি আস্তে আস্তে নামো আমার হাতে শক্ত করে ধর।
মি. মাহিম এই নেন প্রেসক্রিপশন।
রুকন স্যারের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন টা নিয়ে আয়।
আইচ্ছা ভাইজান।
ও বাই দ্যা ওয়ে মি. মাহিম প্রেসক্রিপশনের পেছনে টোটাল টাকার এমাউন্ট পিন করা আছে একটা খামে করে রুকনকে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েন ওকে?
কেরামত লোকটার সত্যিই হিতাহিত বুদ্ধি নাই বল্লেই চলে এই মাথা নিয়ে কি করে বিজ্ঞানী হওয়ার চিন্তা করে!
বেটা রাম ছাগল।
ওকে স্যার আমি টাকাটা এক্ষনি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
লোকটা পাগল এইরকম পরিস্থিতিতে কি কারও টাকার কথা মনে থাকে?
ভাইজান কেরামত স্যার নাকি পাবনা আছিল ২০ দিন।
চুপ কর বেয়াদব।
সৃষ্টি তুমি বারান্দায় বস আমি তোমার জন্য লেবুর শরবত নিয়ে আসি কেমন?
নাকি অন্য কিছু খাবে?
কোন উওর দিলনা সৃষ্টি।
সৃষ্টি বকুল ফুল গাছটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো.....
চলবে.......
"৫ম পর্বের জন্য সাথেই থাকেন"
লেখক: মো: আব্দুল্লাহ আল জুম্মান।
অনেক অনেক শুভকামনা রইল। ভূল - ত্রুটি গুলি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
0 Comments